
দয়া পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা
সারসংক্ষেপ
ঈশ্বরের করুণা দেখতে কেমন? তিনি কি কেবল বলেন, “আমি তোমাকে ক্ষমা করলাম,” নাকি তিনি আমাদের লজ্জাকর অতীতকে শুদ্ধ করার জন্য একটি বিকল্প যুগিয়ে দেন? এই পুস্তিকাটি একটি স্বদেশী ঘটনা বর্ণনা করে বলিদানের বিকল্পের প্রয়োজনীয়তা এবং অর্থ ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করে। পাঠকরা এটা জেনে আশ্বস্ত হবেন যে তাদের পাপ ক্ষমা করা সম্ভব এবং তাদের লজ্জা দূর করা সম্ভব।
প্রকাশনার ধরণ
পুস্তিকা
প্রকাশকগণ
Sharing Hope Publications
যে ভাষায় পাওয়া যাবে:
21 ভাষাগুলো
পৃষ্ঠাগুলো
6
ফা তেমা নামের মেয়েটি সম্পূর্ণ একা একাই ঈদ-উল-আযহা উদযাপন করছিল, তার এই একাকীত্ব ছিল সহ্য সীমার অতিরিক্ত। তার নিজের ভুলের জন্যই তার এই একাকীত্ব, তাই নয় কি?
ফাতেমার মনে পড়ল সে আহম্মদকে বিয়ে করবে বলে তার আব্বার সঙ্গে কি উগ্রভাবেই না তর্ক করেছিল। তার বয়স ছিল অল্প এবং সে প্রেমে পড়েছিল। তার আব্বা কী করে না বলতে পারলেন? যখন সে আহম্মদকে বিয়ে করার জন্য পালিয়ে গিয়েছিল, তার আব্বা বলেছিলেন সে যেন আর কোনদিনও বাড়িতে না ফেরে।
সে ভেবেছিল আহম্মদের জন্য তার ভালবাসার কারণে সে সব অপমান সহ্য করতে পারবে। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই, সে মানতে বাধ্য হল যে তার আব্বার কথাই তার শোনা উচিৎ ছিল। যে আহম্মদকে সে ভালবেসেছিল, এ মানুষটি যেন সে নয়। সে আরেকজন মহিলাকে পাবার জন্য তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
ফাতেমা নিজের কাছে ছোট হয়ে গেল। সে মানলো যে এটাই তার প্রাপ্য ছিল, আর সে তার নিজের ভুলেরই মাশুল দিচ্ছে। ন্যায়বিচার কী সে তা খুব ভাল করেই জানে। কিন্তু হায়, একটু করুণা পাবার জন্য তার প্রাণ কতইনা আকাঙ্ক্ষা করছিল!
যিনি পরম করুণাময় ও দয়াময়
যদি সত্য কথা বলতে হয়, তাহলে বলতে হবে আমরা প্রত্যেকেই ভুল করেছি এবং জ্ঞানীদের পরামর্শ তুচ্ছ করেছি। আমরা অন্যদের কষ্ট দিয়েছি। অন্যেরাও আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছে। ভুল করার প্রবণতার মানুষদের নিয়েই আমাদের সমাজ গঠিত। আর একে অপরকে ক্ষমা করা এবং নিজেদেরকেও ক্ষমা করা কতই না কঠিন!
আমাদের ভুলের কি কোনো ক্ষমা (বা করুণা) আছে?
একবার ভাবুন তো আপনি কতবার “বিসমিল্লাহ্ আল-রহমান আল-রহিম”—“পরম করুণাময়, দয়াময়, সৃষ্টিকর্তার নামে” এই সহজ কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করেছেন। দয়ার (অর্থাৎ ক্ষমা বা করুণার) মধ্যে কী এত বিশেষত্ব আছে?
হতে পারে এর কারণ হল আমাদের সমাজে—এবং আমাদের নিজেদের জীবনেই—দয়ার খুব প্রয়োজন রয়েছে।
দয়া: যে পথটি উত্তম
কয়েক বছর আগে, আব্দুল-রহমান নামে এক লোক তার প্রতিবেশি করীমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তাকে হত্যা করল। মিসরের এই ছোট্ট গ্রামটিতে উভয় পরিবারের জীবনের গতি যেন থেমে গেল। করীমের পরিবার প্রতিশোধ নেবার জন্য উঠে পড়ে লাগল, আর আব্দুল-রহমানের পরিবার সভয়ে চেষ্টা চালাতে লাগল কীভাবে তাকে বাঁচানো যায়। আব্দুল-রহমানের পরিবার চায়নি যেন প্রতিশোধের আগুনটি জ্বলতেই থাকে। সে গ্রামের নেতাদের কাছে পরামর্শ চাইল, আর তারা মৃত্যুর কাফনের কাপড়ের রেওয়াজটি পালনের পরামর্শ দিল।
আব্দুল-রহমান তার নিজের জন্য সাদা কাফনের কাপড় কিনে তার উপর একটা ছুরি রাখলো। সে খোলা ময়দানে সারা গ্রামবাসীর সামনে হেঁটে হেঁটে করীমের পরিবারের কাছে গেল। আব্দুল-রহমান, নিহতের ভাই হাবিবের সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে সেই কাফনের কাপড় এবং ছুরিটি তাকে দিল। সে করুণা ভিক্ষা চাইল এবং পুনর্মিলনের জন্য আবেদন করল।
এরপর হাবিব ছুরিটি আব্দুল-রহমানের গলায় ধরলো। গ্রামের নেতারা একটি ভেড়া এনেছিল, আর হাবিবকে যে কোনো একটা পথ বেছে নিতে হল: সে কি দয়া দেখাবে, নাকি প্রতিশোধ নেবে? আব্দুল-রহমানের গলায় ছুরি ধরার মাধ্যমে সে ঘোষণা করছে, “তুমি এখন আমার হাতে বন্দি। সবাই স্বচক্ষে এটা দেখছে; সবাই বুঝতে পারছে যে তোমাকে হত্যা করার অধিকার এবং ক্ষমতা উভয়ই আমার আছে। কিন্তু আমি তোমাকে দয়া দেখাতে এবং তোমার সঙ্গে পুনর্মিলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি এই রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্বের অবসান চাই।”
সে আব্দুল-রহমানের কাছ থেকে সরে গিয়ে সেই ভেড়াটিকে হত্যা করল। পশুটির মাধ্যমে যখন সমস্ত দুঃখ-ব্যথা, ক্ষোভ, এবং বিচারের অবসান হল, হাবিব গিয়ে আব্দুল-রহমানকে জড়িয়ে ধরল। এভাবে দু’টি পরিবারের মধ্যে শান্তি পুনরুদ্ধার হল।
যদি মানুষ দয়ার সঙ্গে ন্যায়বিচারের সমন্বয় ঘটানোর উপায় খুঁজে বের করতে পারে, প্রভুও নিশ্চয়ই একই কাজ করতে পারেন!
যীশু যিনি মসীহ্: তিনি প্রভু থেকে আগত দয়া
প্রভুর দয়া সম্বন্ধে আমরা কোথা থেকে শিখতে পারি? উত্তরটি খুব সহজ। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন যে মসীহ্ যীশু (যাকে ঈসা আল-মাসীহ্ও বলা হয়) তাকে প্রভু থেকে আগত “দয়া” বলে ডাকা হয়। এর অর্থ এই যে তিনি দয়াকে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবে রূপ দেন। তাঁর পথ—সুসমাচারগুলোতে তাঁর দেয়া শিক্ষামালা, যেগুলো ইঞ্জিল হিসেবেও পরিচিত—এটিই হচ্ছে ক্ষমা ও পুনর্মিলনের পথ।
মসীহ্ যীশুর দ্বারা এরকম সুন্দর একটি ভূমিকা রাখা সম্ভব, তার কারণ তিনিই হলেন প্রভু কর্তৃক প্রেরিত একমাত্র নিষ্পাপ সত্ত্বা। প্রত্যেক নবী বা ভাববাদীর এবং পবিত্র বার্তাবাহকের তাদের ভুলের জন্য ক্ষমার প্রয়োজন হয়েছিল, কিন্তু মসীহ্ যীশুর ক্ষমার প্রয়োজন হয়নি। তাঁকে বিচারের দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়নি, বরং তাঁকে সরাসরি স্বর্গে নেয়া হয়েছিল কারণ তিনি কখনও কোনো ভুল করেন নি—এমন কি ছোট একটি ভুলও তিনি করেন নি।
এ কারণেই তাঁকে বলা হয় প্রভু থেকে আগত দয়া। তিনি আমাদের কাছে খাঁটি দয়ার এক উদাহরণ দিলেন এবং আমাদেরকে শেখালেন কী করে প্রভুর দয়া পাওয়া যায়।
কী করে মসীহ্ যীশু আমাকে সাহায্য করতে পারেন?
লিপিবদ্ধ আছে যে যোহন বাপ্তাইজক (ইয়াহিয়া নামেও পরিচিত) মসীহ্ যীশুকে জনতার ভীড়ে দেখেছিলেন এবং, প্রভু হতে প্রেরণা পেয়ে, সজোরে বলেছিলেন, “ঐ দেখ! ঈশ্বরের (বা আল্লাহর) মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান!” (সুসমাচার, যোহন ১:২৯)। যীশু খ্রীষ্ট সেই ভেড়ারই মত যিনি আব্দুল-রহমানের জন্য পুনর্মিলনের পথ তৈরি করেছিলেন।
যদি আমাদের ভুলের জন্য আমাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়, তাকে বলা হয় ন্যায়বিচার। কিন্তু মসীহ্ যীশু, যিনি সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ছিলেন, তিনি স্বেচ্ছায় আমাদের ভুলের দায় নিলেন। কেউ তাকে চাপ প্রয়োগ করে নি। তিনি ন্যায়বিচারের দাবি মেটানোর জন্যে স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে মৃত্যু নিলেন। পৃথিবীতে যত লোক এসেছে, তাদের মধ্যে কেবল তিনিই ছিলেন একজন সম্পূর্ণ নিষ্পাপ ব্যক্তি, তথাপী তিনি নিজের উপর আব্দুল-রহমানের কাহিনীর ভেড়ার মত আচরণ করতে অনুমোদন দিলেন। এই কারণেই, আমাদের জন্য কষ্টে ভোগার পরে, প্রভু তাঁকে স্বর্গে তুলে নিলেন।
হয়তো আপনার জীবনে সংঘাত রয়েছে। আপনি হয়তো অনেকটা ফাতেমা’র মত, যাদেরকে আপনি ভালবাসেন তাদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছেন। হয়তো কেউ আপনাকে দুঃখ দিয়েছে, নয়তো অন্যায়ভাবে আপনার সুনাম নষ্ট করা হয়েছে। হয়তো আপনি আব্দুল-রহমানের মত, অপরাধী এবং প্রতিশোধের ভয়ে ভীত।
মসীহ্ যীশু আপনাকে সাহায্য করতে পারেন। আপনি কেবল এরকম একটি সংক্ষিপ্ত মিনতি জানাতে পারেন:
প্রভু, আমি কখনও আমার পাপের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে সক্ষম হব না। কিন্তু আমি জানি আমাদের প্রতি আপনার দয়াস্বরূপ আপনি মসীহ্ যীশুকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। সমস্ত মানব জাতির পক্ষে তিনি যে মহৎ কাজ করেছেন তার গুণে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে সাহায্য করুন যেন আমি মসীহ্ যীশুর পথটি বুঝতে পারি যেন আমার জীবনে তোমার দয়ার অভিজ্ঞতা আসে। আমেন।
আপনি যদি আপনার নিজের জন্য সুসমাচারগুলোর কপি চান, অনুগ্রহপূর্বক এই কাগজটির পেছনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
Copyright © 2023 by Sharing Hope Publications. এখানে অন্তর্ভুক্ত কাজ অনুমতি ছাড়াই অ-বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে মুদ্রণ এবং বণ্টন করা যেতে পারে।শাস্ত্রের কথাগুলো নেয়া হয়েছে পবিত্র বাইবেল কেরী ভার্সন) (ROVU) থেকে।
আমাদের সংবাদপত্র পাবার জন্য নিবন্ধন করুন
নতুন প্রকাশনাগুলো বের হলে সবার আগে জানুন!

আপনার শ্রোতাদের খুঁজুন
বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রকাশনাসমূহ
© 2023 Sharing Hope Publications